বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ৫০০ শব্দের রচনা
এতক্ষণে হয়তো বা আপনারা উপরের হেডিং দেখে বুঝে গেছেন। যে আজকের আলোচনার বিষয় কি হতে যাচ্ছে। আজকে আমরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ৫০০ শব্দের রচনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। এ রচনার মধ্যে থাকবে ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর পরিচয় তার শিক্ষাজীবন রাজনৈতিক জীবন মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ইত্যাদি। এ পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে আপনি এর সকল বিস্তারিত বিষয় সুন্দর একটি ধারণা পেয়ে যাবেন।
আরো পড়ুন: মুজিববর্ষে গাছ রোপন পরিবেশ সংরক্ষণ উত্তর
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা
ভূমিকা:
বাংলাদেশের যুদ্ধের কথা মনে পড়লেই মনে হয় সে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা। কারণ তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণে আজ আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। তার এই সাহসী বীরত্বের কারণে আজকে আমরা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র পেয়েছি। তার কারণেই বাংলা সমস্ত মানবজাতির মুক্তির এসেছে।
জন্ম ও পরিচয়:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম পরিচয় নিচে উল্লেখ করা হলো। এই মহাবীরের জন্ম হয়েছে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেনপিতা মাতার তৃতীয় সন্তান। সবাই আদর করে খোকা বলে ডাকতেন।
শিক্ষা জীবন:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পূর্ণ শিক্ষাজীবন সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো। ১৯২৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স ৭ বছর তখন তাকে স্থানীয় গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তাপর ৯ বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে ৪ বছর তাঁর পড়ালেখা বন্ধ থাকে। ১৯৪২ সালে তিনি মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আইএ পাশ করেন। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন। পরে তিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন:
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু করার আগে থেকে তিনি গ্রামের মানুষের দুঃখ দূর্দশা দেখে কখনো ঘরে থাকতে পারেননি। ক্ষুধার্তদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। শীতের কাপড় বিতরণ করতেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সত্যের দিকে কথা বলতেন। যেখানে অন্যায় দেখতেন সেখানেই তিনি কঠোর হয়ে যেতেন। অন্যায়কারীর যত শক্তিশালীই হোকনা কেন তিনি প্রতিবাদ করতে পিছপা হবেন না। তার জাগরণে একটি স্বপ্ন ছিল সেটা হচ্ছে বাঙালি জাতিকে তিনি মুক্ত করবেন।
ভাষা আন্দোলন:
১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ঘোষণা করে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। সে জন্য তাকে ১১ই মার্চ গ্রেফতার করা হয়। তারপর ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন আবারও ঘোষণা করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামলে পুলিশ গুলি চালায়। ফলে সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিয়ুর সহ আরও অনেকে শহীদ হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলখানা থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবিতে হাজার 1966 সালের 3 জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। বঙ্গবন্ধু সহ আরো 35 জন সেনা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করে। পরে 19 জুন আগরতলা মামলা বিচারকার্য হস্তান্তর করা ঢাকা সেনানিবাস।
গণঅভ্যুত্থান:
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠিত হয় ওর 1969 সালের 5 জানুয়ারি ছয় দফা সহ 11 দফা জন্য। বঙ্গবন্ধুর আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। এ পর্যায়ে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে 22 ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পরে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে 23 ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
নির্বাচনী বিজয়:
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
মুক্তিযুদ্ধ:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এর কথা বলে শেষ করা যাবে না। সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করেন। তার পরেও পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তারা ক্ষমতা হস্তান্তরের নানা টালবাহানা শুরু করে দেয়। এরই প্রেক্ষিতে 1971 সালে পহেলা মার্চ হোটেল পূর্বানীতে আমলীগের সংসদীয় সদস্যের অধিবেশন চলাকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এর ফলে সারাবাংলা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং বিক্ষুব্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ। এটিকে বঙ্গবন্ধু আরেকটি চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেন। তারপর তিনি 2 মার্চ ঢাকায় এবং 3 মার্চ সারা পূর্বপাকিস্তানে হরতাল আহ্বান করেন।
তারপর 1971 সালে সাথে মার্চ বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে যুগান্তকারী ভাষণ এর ঘোষণা দেন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্পষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ। এর প্রেক্ষিতে শুরু হয়ে যায় সারাদেশে আন্দোলনের জোয়ার।
তারপরে 25 শে মার্চ রাতের আঁধারে একটি নৃশংস জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটায় পাকিস্তানিরা। তারপরে সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। তারপরেই বঙ্গবন্ধু দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। রাত সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় অপারেশন সার্চলাইট। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড পরিচালনা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। গণহত্যার রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার আগে অর্থাৎ 26 শে মার্চ প্রথম প্রহরে রাত বারোটার সময় বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেস বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।
15 আগস্ট হত্যাকাণ্ড:
ইতিহাসের সেই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হচ্ছে 15 আগস্ট ভয়াবহ কাল রাত। সেদিন ছিল শুক্রবার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিছু বিপথগামী সেনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি 32 নম্বর বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে বঙ্গবন্ধু সহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সেদিন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া ওই বাড়িতে থাকা সকল শহীদ হন।
উপসংহার:
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে আজকে আমরা পেয়েছি সোনার বাংলা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের যার নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্তমান তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি হচ্ছেন বাঙালি জাতির চেতনা। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে এক অভিন্ন নাম।