শীতের আগমনে শীতের সুন্দর সুন্দর কবিতা ও ছন্দ
এই শীতে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। শীত আসলে আমাদের বিভিন্ন পিঠা পুলি খাওয়ার উৎসব এবং খেজুরের রস খাওয়ার উৎসব লেগে যায়। শীতের সকালে কুয়াশা ভেজা মেঠো পথ ধরে হাটলে মনে হয় রূপকথার দেশে হাটতেছি।
কুয়াশাঘেরা চারদিক দেখে মনে হয় রূপকথার গল্পের মাঝে আছি। এই শীতকে ঘিরে বড় বড় মনীষী এবং কবিরা বিভিন্ন ধরনের কবিতা ও ছন্দ লিখেছেন। আজকে আপনাদের সাথে কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আর কবিদের শীত নিয়ে সুন্দর সুন্দর কবিতা ও ছন্দ লিখে গেছেন। আজকে আপনাদের সেই সুন্দর সুন্দর কবিতা গুলো শেয়ার করবো।শীতের আগমনে শীতের সুন্দর সুন্দর কবিতা ও ছন্দ নিচে দেওয়া হলো।
আরো পড়ুন: শীত নিয়ে রোমান্টিক ফেসবুক স্ট্যাটাস ও শক্তিশালী উক্তি,বানী
শীতের সুন্দর সুন্দর কবিতা ও ছন্দ
মঙ্গলাচরণ
কাজী নজরুল ইসলাম
রঙনের রঙে রাঙা হয়ে এল শীতের কুহেলি-রাতি,
আমের বউলে বাউল হইয়া কোয়েলা খুঁজিছে সাথি।
সাথে বসন্ত-সেনা
আগে অজানার ঘেরা-টোপে তব চিরজনমের চেনা ।
পলাশ ফুলের পেয়ালা ভরিয়া পুরিয়া উঠেছে মধু,
তব অন্তরে সঞ্চরে আজ সৃজন-দিনের বধূ –
উঠিছে লক্ষ্মী ওই
তোমার ক্ষুধার ক্ষীরোদ-সাগর মন্থনে সুধাময়ী।
হারাবার ছলে চির-পুরাতনে নূতন করিয়া লভি,
প্রদোষে ডুবিয়া প্রভাতে উদিছে নিত্য একই রবি
তাই সুন্দর সৃষ্টি
একই বরবধূ জনমে জনমে লভে নব শুভদৃষ্টি।
আদিম দিনের বধূ তব ওই আবার এসেছে ঘুরে
কত গিরিদরি নদী পার হয়ে তব অন্তর-পুরে।
কী দিব আশিস ভাই
তোমরা যে বাঁধা চির-জনমের – কোথাও বিরহ নাই।
না থাকিলে এই একটু বিরহ – এ জীবন হত কারা,
দুই তীরে তীরে বিচ্ছেদ তাই মাঝে বহে স্রোত-ধারা।
গত জনমের ছাড়াছাড়ি তাই এ মিলন এত মিঠে
সেই স্মৃতি লেখা শুভদৃষ্টির সুন্দর চাহনিতে।
ওগো আঙিনার সজিনা-সজনি,করো লাজ বরিষন
তব পুষ্পিত শাখা নেড়ে সখী, খইয়ে নাই প্রয়োজন।
আমের মুকুল আকুল হইয়া ঝরো গো দুকূলে লুটি,
বধূর আলতা চরণ-আঘাতে অশোক উঠো গো ফুটি।
বাজা শাঁক দে লো হুলু,
হারা সতী ফিরে এলে উমা হয়ে – উলু উলু উলু উলু!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর শীতের কবিতা
শীতের বিদায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
<——————–>
তুঙ্গ তোমার ধবলশৃঙ্গশিরে
উদাসীন শীত, যেতে চাও বুঝি ফিরে?
চিন্তা কি নাই সঁপিতে রাজ্যভার
নবীনের হাতে, চপল চিত্ত যার।
হেলায় যে-জন ফেলায় সকল তার
অমিত দানের বেগে?
দণ্ড তোমার তার হাতে বেণু হবে,
প্রতাপের দাপ মিলাবে গানের রবে,
শাসন ভুলিয়া মিলনের উৎসবে
জাগাবে, রহিবে জেগে।
সে যে মুছে দিবে তোমার আঘাতচিহ্ন,
কঠোর বাঁধন করিবে ছিন্ন ছিন্ন।
এতদিন তুমি বনের মজ্জামাঝে
বন্দী রেখেছ যৌবনে কোন্ কাজে,
ছাড়া পেয়ে আজ কত অপরূপ সাজে
বাহিরিবে ফুলে দলে।
তব আসনের সম্মুখে যার বাণী
আবদ্ধ ছিল বহুকাল ভয় মানি’
কণ্ঠ তাহার বাতাসেরে দিবে হানি’
বিচিত্র কোলাহলে।
তোমার নিয়মে বিবর্ণ ছিল সজ্জা,
নগ্ন তরুর শাখা পেত তাই লজ্জা।
তাহার আদেশে আজি নিখিলের বেশে
নীল পীত রাঙা নানা রঙ ফিরে এসে,
আকাশের আঁখি ডুবাইবে রসাবেশে
জাগাইবে মত্ততা।
সম্পদ তুমি যার যত নিলে হরি’
তার বহুগুণ ও যে দিতে চায় ভরি,
পল্লবে যার ক্ষতি ঘটেছিল ঝরি,
ফুল পাবে সেই লতা।
ক্ষয়ের দুঃখে দীক্ষা যাহারে দিলে,
সব দিকে যার বাহুল্য ঘুচাইলে,
প্রাচুর্যে তারি হল আজি অধিকার।
দক্ষিণবায়ু এই বলে বার বার,
বাঁধন-সিদ্ধ যে-জন তাহারি দ্বার
খুলিবে সকলখানে।
কঠিন করিয়া রচিলে পত্রখানি
রসভারে তাই হবে না তাহার হানি,
লুঠি লও ধন, মনে মনে এই জানি,
দৈন্য পুরিবে দানে।
পৌষের শীত
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
‘পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন।
তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ ॥
ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।
মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥’
<————————>
পৌষ
কাজী নজরুল ইসলাম
পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশ্র”-পাথার হিম পারাবার পারায়ে
ঐ যে এলো গো-
কুজঝটিকার ঘোম্টা-পরা দিগন-রে দাঁড়ায়ে।।
সে এলো আর পাতায় পাতায় হায়
বিদায়-ব্যথা যায় গো কেঁদে যায়,
অস্ত-বধূ (আ-হা) মলিন চোখে চায়
পথ-চাওয়া দীপ সন্ধ্যা-তারায় হারায়ে।।
পউষ এলো গো-
এক বছরের শ্রানি- পথের, কালের আয়ু-ক্ষয়,
পাকা ধানের বিদায়-ঋতু, নতুন আসার ভয়।
পউষ এলো গো! পউষ এলো-
শুক্নো নিশাস্, কাঁদন-ভারাতুর
বিদায়-ক্ষণের (আ-হা) ভাঙা গলার সুর-
‘ ওঠে পথিক! যাবে অনেক দূর
কালো চোখের কর”ণ চাওয়া ছাড়ায়ে।।’