পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আকুতি কলকাতায় আটকে পড়া ১৫ বাংলাদেশি নাবিকের
বর্তমানে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে কলকাতার একটি পোর্টে বাংলাদেশি 15 নাবিক আটকা পড়েছে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে 15 নাবিক ফেসবুক লাইভে তাদের প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছে। তারা বলছে তাদেরকে এখান থেকে উদ্ধার করা হোক। তাদের সাথে অনেক অমানবিক ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তারা পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে চায়।
একমাস আগে পণ্যবাহী জাহাজ কলকাতার পোর্টে ডুবে যায়। সেখান থেকে কোনরকম 15 জন নাবিক প্রাণে বেঁচে ফিরে। বন্দর কতৃপক্ষ নাবিকদের বর্তমানে কলকাতার মেরিন ক্লাব হোটেলে জিম্মি করে রেখেছে। সেখানে তারা বর্তমান শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় আছে তারা বলেছে তাদেরকে যেকোনো সময় খাবার বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তারা আরও বলেছে তাদেরকে দেশে ফেরানোর কোন প্রকার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে না। এই ঘটনাটি 15 নাবিক গত বৃহস্পতিবার সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ভিডিওতে ডুবে যাওয়ার জাহাজ টি এম ডি এবং মেরিন এর প্রধান প্রকৌশলী বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় তার পাশে আরও 14 জন নাবিক বাঁচার আকুতি জানায়।
ভিডিও ধারণ করার সময় সেখানকার প্রকৌশলী ফাহিম ফয়সাল এর ভাষ্যমতে তিনি বলেন, গত 20 মার্চ 15 জন নাবিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলকাতায় যান। সেখানে 23 মার্চ পৌঁছায় এবং 24 মার্চ পণ্যবাহী কনটেইনার তোলা শেষ করার সময় একপাশে জাহাসটি কাত হয়ে উল্টে যায়। এই সময় দ্রুত সেখান থেকে জাহাজের নাবিকরা নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যায়। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদেরকে মেরিন ক্লাব হোটেল এর মধ্যে নিয়ে রাখে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদেরকে এক মাস ধরে একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছেন। সেখানকার লোকাল এজেন্সি তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছে।
তারপর জাহাসটি সকল নাবিকের প্রধান ফাহিম ফয়সাল বলেন ,তারা কলকাতা ও বাংলাদেশের যোগাযোগ করেছেন কিন্তু তাদের ফেরানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাংলাদেশ এর মালিকপক্ষ তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বর্তমানে তিনি তাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করতেছে না। একপ্রকার পলাতক তিনি।
নাবিকরা একপ্রকার হোটেলে কারা বদ্ধভাবে রয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের কে বলেছে তাদেরকে যেকোনো সময় খাবার বন্ধ করে দিতে পারে। নাবিকরা সবাই দেশে ফেরার জন্য রাষ্ট্রপতি ,প্রধানমন্ত্রীসহ সকল কর্তৃপক্ষের কাছে উচ্চস্বরে ভিডিওর মধ্যে আকুতি জানিয়েছে।
ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের বাঁচান, আমাদের যেন বলির পাঠা বানানো না হয়। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের জীবন হুমকির মুখে। যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। আমরা সবাই এক কাপড়ে আছি। আমরা নিরুপায়।’
জানা গেছে আটকে পড়া নাবিকরা একজনের বাসা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামের। আরেকজন রফিকুল ইসলাম এর ছেলে মিজানুর রহমান। এর আগে হোয়াটসঅ্যাপে মিজানুর রহমানের সাথে কথা হয় মিজানুর রহমান বলেন তাঁরা সাতটি কক্ষে 15 জন অবস্থান করছেন। তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের কাছে কোন টাকা নেই। পড়ালেখার সনদপত্রসহ সব পোশাক জাহাজের মধ্যে রেখেছেন। সেজা স্টার ডুবে গেছে। হোটেলের ভেতরে তাদেরকে যে খাবার দেয়া হচ্ছে সেগুলো তেমন ভালো না খাওয়া যায় না। তিনি বলছেন সবাই অনেক কষ্টে রয়েছে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন বর্তমানে কোন পক্ষ সাড়া দিচ্ছে না। তারা খুব বিপদের মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশ জানো আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনে সে আকুতি। সেখানে যে নাবিক গুলো রয়েছে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তারা সবাই পরিবারের সাথে ঈদ কাটাতে চান।
ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন উদ্ধার করতে না পারায় 23 এপ্রিল চারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন মালিকপক্ষ। এরপর নাবিকদের দেশে ফেরানোর জন্য মালিকপক্ষকে আমরা তাগাদা দিয়েছি।
সর্বশেষে আপনাদের একটি কথাই বলবো। কলকাতায় আমাদের দেশের যে 15 নাবিক খুব অসুবিধার মধ্যে রয়েছে। তাদের কে দেশে ফেরানোর জন্য আমরা দোয়া করব। সেই সাথে আমরা এই পোস্টটি সকলের মাঝে শেয়ার করে দিব যাতে সবাই দেখতে পারে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুতি জানাতে পারে। যেন তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হয়।