খাটি মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা-মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম
সেই আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। মধু একটি খাদ্য নয় এটি এক ধরনের ভেষজ গুণাগুণ সম্পন্ন ঔষধ। মধু মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অপূর্ব নেয়ামত। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যাবতীয় রোগ নিরাময়ের ঔষধ হচ্ছে মধু। এ মধু নিয়ে আমাদের ধর্মে অনেক কথা রয়েছে। মধু নিয়ে রাসুল সা: বলেছেন ‘খাইরুদ্দাওয়া বা মহৌষধ ।
আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানী চিকিৎসা ক্ষেত্রে মধুকে মহা ঔষধ হিসেবে ধরা হয়। যে সকল ভাই ও বোনেরা নিয়মিত মধু খান এবং মধুর গুনাগুন এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তারা সঠিক ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন।। আজকে আমরা আপনাদের মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবো। আপনারা আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন তাহলে আপনারা মধু সম্পর্কে সুন্দর একটি বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। নিচে মধু খাওয়ার গুনাগুন আলোচনা করা হলো। খাটি মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা-মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম নিচে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুন: কাচা ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা ব্যাখ্যা
আসল মধুর গুনাগুন
- মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা, যা দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে;
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;
- দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে;
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালি প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করে;
- দাঁতকে পরিষ্কার ও শক্তিশালী করে;
- আলচার ও গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্য উপকারী;
- বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে;
- গ্লাইকোজেনের লেভেল সুনিয়ন্ত্রিত করে;
- মধুর ক্যালরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে রক্তবর্ধক হয়;
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে;
- দুর্বল শিশুদের মুখের ভেতর পচনশীল ঘায়ের জন্য খুবই উপকারী;
- শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে;
- ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মধু স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের কলা সুদৃঢ় করে;
- ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে;
- আন্ত্রিক রোগে উপকারী। মধুকে এককভাবে ব্যবহার করলে পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায়;
- মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে;
- মধুতে স্টার্চ ডাইজেস্টি এনজাইমস এবং মিনারেলস থাকায় চুল ও ত্বক ঠিক রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করে;
- বাতের ব্যথা উপশম করে;
- জিহ্বার জড়তা দূর করে;
- শরীর ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে;
- মধু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে;
- রক্ত পরিশোধন করে;
- মাথা ব্যথা দূর করে;
- মধু খাওয়ার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীর হয়ে উঠে সুস্থ, সতেজ এবং কর্মক্ষম।
- গলা ব্যথা, কাশি-হাঁপানি এবং ঠাণ্ডা জনিত রোগে বিশেষ উপকার করে;
- ব্যায়ামকারীদের শক্তি বাড়ায়;
- শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শক্তি-সামর্থ্য দীর্ঘস্থায়ী করে;
- শিশুদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে তার ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি সহজে হয় না;
- শিশুদের দৈহিক গড়ন ও ওজন বৃদ্ধি করে;
- ড. কে এম খালেকুজ্জামান* ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া
খাঁটি মধু চেনার উপায়
মধুতে নানাবিধি গুনাগুন রয়েছে। তবে গবেষকরা 45 টি উপাদান মধুতে পেয়েছেন। আসল মধু চেনার উপায় হচ্ছে। প্রথমে একটি কাঁচের গ্লাসে একগ্লাস পানি নিবেন। তারপর সেই পানিতে এক ফোঁটা মধু ফেলবেন। যদি মধুটি গ্লাসটির তলায় আসতে আসতে পানির সাথে মিলে যায় তাহলে বুঝবেন মধুতে ভেজাল। আর যদি পানির সাথে না মিশিয়ে একত্রিত হয়ে গ্লাসের নিচে এসে পড়ে তাহলে বুঝবেন বধূটি আসল। এর কারণ হচ্ছে ভেজাল মধু মূলত চিনি দিয়ে তৈরি করা হয় আর চিনি পানির সাথে দ্রবীভূত হয় যার ফলে ভেজাল মধু পানিতে পড়লে তা পানির সাথে মিশে যাবে।
মধুর অপকারিতা
আমরা অনেকেই ভেবে থাকি যে মধুর উপকারিতা আছে বলেই এর অপকারিতা থাকতে পারে। তবে মধুতে তেমন কোনো উপকারিতা নাই। মধুতে এর গুনাগুন অনেক বেশি থাকে। তবে আপনি অতিরিক্ত মধু খেলে আপনার শরীরে জ্বালাপোড়া অনুভব হবে এবং শরীর গরম হয়ে যাবে। সুতরাং আপনাকে মধু পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
মধু খাওয়ার নিয়ম
মধুর তাপমাএা ৪২° সেন্টিগ্রেডের উপরে হলে মধুর গুণ পরিবর্তন বা change হয়ে বিষাক্ত হয়ে যায়। তাই আপনি যখন গরম পানির সাথে মধু মেশাবেন বা চায়ের চিনির বিকল্প হিসেবে মধু ব্যবহার করলে, তখন খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অতিরিক্ত গরম না হয়।
মধুতে থাকা উপাদান গরম কোনো কিছুর সংস্পর্শে বিষাক্ত হয়ে যায়। মধু কখনোই গরম করা বা রান্নায় ব্যবহার করা উচিত নয়। মধু ঠান্ডা খাওয়াই ভালো। বাজার থেকে কিনে আনা মধু এমনি প্রক্রিয়াজাত করার সময় তাপের সংস্পর্শে আসে। বেশিরভাগই ক্ষেত্রে মধু প্লাস্টিকের কৌটায় বিক্রি হয়। ফলে মধুর গুণাগুণ এমনিতেই কমে যায়। তার ওপর কোনো কিছুতে গরম করে মিশিয়ে পান করলে কার্যকারিতা একেবারেই কমে যায়।
কেউ কেউ ঘুম থেকে উঠেই গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করেন, যা শরীর সুস্থ-সবল রাখে এবং শরীর থেকে toxins বের করে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু হালকা গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করা উচিত।
যাদের বেশি ওজন তারা হালকা গরম পানি সাথে লেবুর রস সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করবেন। ফলে প্রতিনিয়ত সকালে মিশ্রিত পানীয় পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। দীর্ঘ মেয়াদী ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
পানি বা চা হালকা ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন অর্থাৎ গরম পানি বা চা এর তাপমাত্রা ৪২° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে থাকতে হবে। তাপমাএা ৪২° নিচে থাকলে চা বা পানি সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন।
যে সকল ভাই ও বোনেরা আমার এই পোস্টটি পড়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলব। মনে হচ্ছে মানবদেহের জন্য মহা ঔষধ। কিন্তু সে মধুটি উপরে যে নিয়ম দেওয়া আছে সে অনুযায়ী সেবন করবেন বা খাবেন। অতিরিক্ত মদ খেলে আপনার হিতে বিপরীত হতে পারে।