Skip to content
Home » ক্ষুধার জালায় কি করলো দুটি শিশু,শিকলে বেঁধে রাখছেন মা–বাবা

ক্ষুধার জালায় কি করলো দুটি শিশু,শিকলে বেঁধে রাখছেন মা–বাবা

ক্ষুধার জালায় কি করলো দুটি শিশু,শিকলে বেঁধে রাখছেন মা–বাবা

ক্ষুধার জালায় কি করলো দুটি শিশু,শিকলে বেঁধে রাখছেন মা–বাবা ,ক্ষুধার তাড়নায় কি করলো দুটি শিশু। কেনই বা তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। এই খবর উদঘাটন করতে গিয়ে প্রথম আলো একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল।

সামনে ঈদ, ঈদকে কেন্দ্র করে সকলে নতুন জামা কাপড় কেনা শুরু করে দিয়েছে। নতুন পোশাক পরে সবাই ঈদের নামাজ পড়বে এবং প্রিয়জনদের সাথে দেখা করবে। অথচ ঈদ নেই রংপুরের বদরগঞ্জের দুটি শিশু। তারা হচ্ছে রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভা বাসিন্দা। রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভা রেল বস্তির দুটি শিশুর জীবনে নেই ঈদের আনন্দ। শিকলে বাঁধা আছে তাদের জীবন। শিশু দুটির নাম হচ্ছে সুমন হোসেন এবং সিমন হোসেন।

তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার কারন জানতে গিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। দারিদ্রতার কারণে ওই পরিবারের সদস্য দুজনকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। কারণ তারা ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে খাবার চায় এবং সেখানকার গাছের ফল না বলে ছিড়ে নিয়ে আসে। এ সকল কর্মকান্ডের কারণে প্রতিবেশীদের বিভিন্ন ধরনের কথার সম্মুখীন হতে হয় তাদের বাবা-মার। চরম দারিদ্রতার মুখোমুখি হয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েছে তাদের পায়ে শিকল দিতে হয়। সুমনকে ৬ মাস ধরে এবং সিমণকে পনেরো দিন ধরে তাদের বাড়ির উঠানে শিকল বন্দি করে রেখেছে তাদের বাবা-মা।

সুমন এবং সিমনের বাবার নাম হচ্ছে আমির হোসেন তিনি মূলত একজন দালাল। গরু কেনাবেচা করে মাঝখানে যে টাকাটা থাকে সেটা তার ইনকাম। তার মা হচ্ছেন গৃহিণী ।তার মায়ের নাম শেফালী বেগম। তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই, রেল বস্তিতে একটি ঝুপড়ির মধ্যে তারা সবাই বসবাস করে।

ক্ষুধার জালায় কি করলো দুটি শিশু

তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, খাবার না পাওয়ার কারণে শিশু দুটিকে সিকল বন্ধ করে রাখে তার বাবা-মা। এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে রোববার বিকেলে রেল বস্তিতে শিশু দুটির ঘরে গিয়ে প্রথমে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছিল এরপর উঁকি দিয়ে দেখা যায় ছোট্ট রান্না ঘরের ভেতরে একটি শিশুর পা শিকল দিয়ে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে।

তখন শিশুটির কাছে জানতে চাইলে বলে, তার নাম সিমন হোসেন। তার সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই তার মা শেফালী বেগম এখাতে শিকল ধরে শিশুর সুমন হোসেনকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। তখন দেখা যায় সীমনের এক পায়ে শিকল লাগানো কিন্তু ঘরের ভিতরে ঢুকলে তার আরো দুই সন্তানের সাথে দেখা হয়। একজনের নাম হচ্ছে ইবল হোসেন ও আম্বিয়া খাতুন। তাদের প্রায় কোন শিকল দেখা যায়নি তারা মুক্ত অবস্থায় ছিল।

এ বিষয়ে শেফালী বেগম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভাবের কারণে তাদের ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো খাওয়াতে পারেন না তিনি। এর ফলে তাঁর দুই ছেলে পাশের বাড়িতে গিয়ে খাবার চায় এবং গাছ থেকে না বলে ফল ছিরে আনে। এর ফলে বস্তির অনেক লোকজন তার কাছে বিচার দেয় এবং হারানো জিনিস পত্র তাকে দিতে বলে।কিন্তু সে বলে তার ছেলেরা এগুলো আনিনি মানুষের বিভিন্ন ধরনের কথার কারণে তাদের পায়ে শিকল দিয়ে রেখেছে তার বাবা-মা।

কি কারনে তার ছেলেরা এরকম করে সে বিষয়ে জানতে চাইলে শেফালী বেগম কাঁদতে থাকে। সে এক পর্যায়ে বলে তাদের পাঁচ জন ছেলেমেয়ে। তাদের বাবা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে ঠিকমতো আয় রোজগার করতে পারো না। একদিন ঠিক মত কাজ করলে 4, 5শ টাকা পায়। এতে কোনো রকম তাদের খাওয়া চলে যায়। অন্যদিন যদি কাজ না করতে পারে তাহলে তাদের অনাহারে থাকতে হয়। মূলত ক্ষুধার কারণে তার ছেলেরা বাড়ির আশেপাশে গিয়ে প্রতিবেশীদের ডিস্টার্ব করে।

এছাড়াও তিনি আরো বলেন তাদের মোট ৮ জন সন্তান ছিলেন। গর্ভ অবস্থায় দুই যমজ ছেলে মারা যায় এবং এক ছেলেকে বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে তাদের পাঁচ জন ছেলেমেয়ে রয়েছে টাকার অভাবে তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিনা।

তিনি সরকারের কাছে সাহায্য শুরু একটি ঘর চেয়েছে। যাতে তার একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়।শেফালী বেগম বলেন, তাঁর স্বামী আগে দিনমজুরি করতেন। এখন বয়স বেশি হওয়ায় ভারী কাজকর্ম করতে পারেন না।

এ সময় কথা হয় আমির হোসেনের সঙ্গে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছইলেরা ক্ষিদার জ্বালায় এর–ওর বাড়িত যাইত। এইটা নিয়া অনেক কথা শুনতে হইত। তাই ওদের মা পায়ে ঝিনজির (শিকল) নাগেয়া বান্দি (বেঁধে) থুইচে।’

আমির হোসেন এবং শেফালী বেগম এর সকল মতামত জানার পর এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় বদরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সায়ীদের সংগীত। তখন আবু সাঈদ বলেন এ ঘটনাটি তার জানা ছিল না এবং এই ঘটনাটি একেবারেই অমানবিক। তিনি বলেন খোঁজ নিয়ে দ্রুত ওই দুটো শিশুকে মুক্ত করা হবে এবং পরিবারটিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *